কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
বৃষ্টিতে ভেজা,সমুদ্র স্নান আর নাচ–গানের নানা আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবাগানে চলছে রাখাইনদের মন রাঙানো বর্ষা উৎসব। প্রায় দুইমাসব্যাপি এ উৎসবকে ঘিরে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সৈকতের ঝাউ বাগানে বসে রাখাইন তরুণ–তরুণীদের মহামিলন মেলা। আগামী ২০ জুলাই এ উৎসবের শেষ দিন।
জানা গেছে, প্রতি বছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান তিনমাসব্যাপী আষাঢ়ি পূর্ণিমার আগে (আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত)আড়াই থেকে তিনমাস রাখাইন সমপ্রদায় সৈকতে এ উৎসব পালন করে থাকে। কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসব নয়, শুধুমাত্র সবাই মিলে মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে মহা আনন্দে মেতে ওঠার জন্যই এ উৎসব। এ বছর মে মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার এ উৎসব শুরু হয়। এর পর থেকে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এ উৎসব চলছে। রাখাইন নেত্রী মাটিন টিন জানান, প্রায় শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সমপ্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে। এক সময় হিমছড়ির অরণ্যে এ উৎসব উদযাপন করা হতো। রাখাইন তরুণ–তরুণীরা নানা রকমের খাবার দাবারসহ চলে যেতো সেখানে। গত কয়েক বছর থেকে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙানো এ বর্ষা উৎসব।
রাখাইন যুবক উশিবু ও কেংগ্রী রাখাইন জানালেন,এ উৎসবের সাথে ধর্মীয় উৎসবের কোন সম্পৃক্ততা নেই। সকল দ্বিধা–দ্বন্দ্ব,সংঘাত হানাহানি ভুলে সবাই মিলে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে সারাদিন আনন্দে মেতে থাকার জন্যই মূলত এ আয়োজন।
শুক্রবার শেষে দিনে (৪ জুলাই) সৈকতের ঝাউবাগানে দেখা গেল, শিশু–কিশোর,যুবক,বৃদ্ধাসহ হাজারো প্রাণের বাঁধভাঙ্গা আনন্দ। অসংখ্য তরুণ–তরুণী দল বেঁধে কেউ নাচছে, কেউ গাইছে, আবার অনেকে নিজেদের রান্না করা মজার মজার খাবার–দাবার নিয়ে ব্যস্ত। শুধু তরুণ–তরুণী নয়,শিশু–কিশোর ও বৃদ্ধরাও বাদ যায়নি এ আনন্দায়োজন থেকে। আনন্দ মুখর নানা আয়োজনে বদলে গেছে সৈকতের চেহারা।
চাকুরীর সুবাদে এখন কক্সবাজারে থাকেন উছিমং মারমা। বাড়ি কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা। গতকাল বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিতে তিনিও আসেন সৈকতে। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে উছিমং জানালেন,এ উৎসবে এলেই অনেক পুরণো বন্ধু–বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। তাই প্রতি বছর যেখানে থাকিনা কেন,এখানে ছুটে আসি। এখানে এলেই প্রাণ খুলে মজা করা যায়।
রাখাইন তরুণী নীলা বললেন, যে যাই বলুক। আমি বলব বর্ষা উৎসব। বৃষ্টির সাথে এ উৎসবের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কারণ যে দিন বৃষ্টি বেশী হয়,ওই মজা হয় বেশী।
উৎসবে এসে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নে রাখাইন যুবক কেংগ্রী রাখাইনের জবাব,সবাই মিলে–মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠার জন্যই মূলত এখানে আনা। অনেকেই এটিকে বরষাকালীন পিকনিকও বলছে। আমি বলব,এ উৎসবের মধ্যদিয়ে বর্ষাকে বরণ করা।
দল বেঁধে সমুদ্র স্নানে নামছিলেন একদল রাখাইন তরুণ–তরুণী। তাদের মতে, বর্ষা মানেই বৃষ্টির সঙ্গে মাতামাতি।্ তাই বৃষ্টিতে ভেজা আনন্দ তো আছেই। এ আনন্দের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় হাল্কা মাদকতা । তাই মজার ছলে অনেকে উৎসবে পান করে দেশীয় তৈরী মদ।
তারা আরো বললেন,বর্ষা উৎসবের শেষ আনন্দ সমুদ্র স্নান। সারাদিন ঝাউবাগানে নেচে গেয়ে মন রাঙ্গিয়ে দিনের শেষ লগ্নে সমুদ্র স্নান শেষে বুকভরা প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরা। কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাথিন অং রাখাইন জানান, ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে এ উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র আনন্দ করার জন্য এ আয়োজন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব শুরু করলেও বর্তমানে এ উৎসব শুধুমাত্র কক্সবাজারের রাখাইনদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। জেলার গন্ডি পেরিয়ে বান্দরবান,রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি থেকেও লোকজন এ উৎসবে যোগ দেন।
পাঠকের মতামত: